আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় আমলকী প্রাচীনযুগ থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে আমলকীকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভাণ্ডার বলে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত আমলকী খেলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা অনায়াসে নির্মুল করা সম্ভব। আর আজকের এই পোস্টে জানতে পারবেন আমলকীর অজানা উপকারিতা ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে।
১। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
আমলকী এমন একটি ঔষধি ফল যেটা রক্তে লিপিড ও শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কোন রোগী যদি নিয়মিত আমলকী খায় তাহলে অন্য ডায়াবেটিস রোগীর তুলনায় তার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাবে। আবার অনেক গবেষণায় এটাও দেখা গিয়েছে যে, ডায়াবেটিসের কারণে লিভারজনিত কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রতিদিন আমলকী খেলে তা পুরোপুরি নির্মুল করা সম্ভব। তবে আপনার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে অনেক কিছুই সম্ভব আবার অনেক কিছুই সম্ভব না। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
জেনে নিন, পুরুষের যৌন সমস্যার শতভাগ কার্যকরী এবং স্থায়ী সমাধান
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি-সহ এমন সব ভেষজ উপাদান রয়েছে যা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকর। এছাড়াও এটি শরীরের সার্বিক ক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন যদি অন্তত ১টি আমলকী খাওয়া যায় তাহলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে বাধ্য। ফলে আপনার কিংবা আপনার বাচ্চার আর ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার প্রবণতাও থাকবেনা।
৩। গল ব্লাডার স্টোন হতে বাধা দেয়
গল ব্লাডারে স্টোন হওয়া খুবই পরিচিত একটি রোগ। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায়। লিভার এবং অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা হওয়ার কারণেই মূলত এটি হয়ে থাকে। কারণ তখন লিভার থেকে পাচক রস সঠিকভাবে নিঃসৃত হয়না। ফলে হজমক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয় এবং গল ব্লাডারে স্টোন হয়। তাই সঠিকভাবে যদি লিভার এবং অগ্ন্যাশয়ের যত্ন নেওয়া যায় তাহলে এটি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আর আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় তা লিভার ও অগ্ন্যাশয়ের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তাই নিয়মিত আস্ত আমলকী বা আমলকীর গুড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
জেনে নিন, পুরুষের মেহ/ প্রমেহ/ প্রসাবে ক্ষয়/ ধাতু ক্ষয়জনিত সমস্যার শতভাগ কার্যকরী সমাধানসমূহ
৪। লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
আমলকী টক জাতীয় ফল হওয়ায় এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। আর লিভার সুস্থ রাখতে এগুলো গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি লিভারকে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট থেকে মুক্তি দেয় এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত আমলকী খেলে লিভার তো সুস্থ থাকেই আবার শরীরের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ গুলিও বের হয়ে যায়। ফলে লিভারের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং আপনার লিভার থাকে একদম সুস্থ।
৫। ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
আজকের জামানায় ক্যান্সার একটি অতি পরিচিত সমস্যা যেটা হলে মরণ অবধারিত বলেই ধরে নেওয়া হয়। কারণ এখনো ক্যান্সারের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে আমরা যদি আমাদের খাবারের দিকে একটু নজর দেই তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি। আমলকীতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পাশাপাশি অ্যান্টি-ক্যান্সারাস উপাদানও রয়েছে বলে গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন। ফলে নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অভ্যাস করলে প্রাকৃতিকভাবেই ক্যান্সারকে দূরে রাখতে পারবেন।
৬। হজম শক্তি বাড়ায়
পেটের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হজমক্রিয়া ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। আর আমলকী প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল যেটা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ফলে পায়খানা পরিষ্কার হয়। নিয়মিত আমলকী খেলে হজমক্রিয়া সঠিকভাবে হওয়ার জন্য লিভার থেকে গ্যাস্ট্রিক জুস অর্থাৎ পাচক রস নিঃসৃত হয়। তাই আপনি যদি হজমজনিত কোন সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আজ থেকেই আমলকী চিবিয়ে বা আমলকীর পাউডার পানিতে মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন।
৭। গলা ব্যাথা কমাতে কার্যকর
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় হোক কিংবা একটু ঠাণ্ডা লাগলেই অনেকের গলা ব্যথা হওয়ার সমস্যা দেখা যায়, যেটা অনেকে টনসিলের সমস্যা বলে মনে করে থাকে। কিন্তু অনেক সময় ভিটামিনের অভাবের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত যদি আমলকী খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। কারণ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকীর রস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন অথবা আমলকীর গুড়া পানিতে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে করে খুব সহজেই গলা ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সবসময় ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।