অশ্বগন্ধা বা উইন্টারচেরী ( Winter cherry) কে বলা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের শিরমণি, যার উপকারিতা হাতে গুণে শেষ করা যাবে না। প্রাচীনকাল থেকেই অশ্বগন্ধা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অশ্বগন্ধায় উপস্থিত আছে ফাইটোকেমিক্যাল, অ্যালকালয়েড, স্ট্রেরয়ডাল ল্যাক্টনস, ট্যানিনস, স্যাপোনিনস, যা স্ট্রেস, বার্ধক্যজনিত প্রভাব, চুলের সমস্যা, যৌন অক্ষমতা, প্রদাহ জনিত সমস্যা ও শারীরিক দুর্রবলতার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক, অশ্বগন্ধার উপকারিতা বিষয়ক বেশ কিছু তথ্যাদি –
* অনিদ্রা দূর করে – ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করতে অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকারী একটি ঔষধি ভেষজ, এর ফলে ঘুম খুব ভাল হয়।
* স্ট্রেস কমায় – অশ্বগন্ধায় অ্যানজাইলটিক উপাদান উপস্থিত থাকে বলে এটি মানসিক চাপকে কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
* কোলেস্টেরল দূর করে – আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়, অশ্বগন্ধা ভেষজ মানব শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
* অশ্বগন্ধা কাম উত্তেজনা সৃষ্টিতে সহায়ক – প্রাচীনকাল হতে অশ্বগন্ধা একটি আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিংবদন্তি শাস্ত্র কাম সূত্রে অশ্বগন্ধাকে অত্যন্ত শক্তিশালী যৌন উত্তেজক ভেষজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে, অশ্বগন্ধা ভেষজ আফ্রোডাইজিয়াক পণ্যগুলির মধ্যে একটি অনন্য। অশ্বগন্ধা কামাকাঙ্ক্ষা হ্রাস এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় কার্যকরী ভেষজ হিসেবে স্বীকৃত। পুরুষরা যখন অশ্বগন্ধা সেবন শুরু করেন, তখন তাদের দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বেড়ে যায়। এটি যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং তৃপ্তির বৃদ্ধি ঘটায়।
* যৌনক্ষমতা বাড়ায় – এটি প্রমাণিত যে অশ্বগন্ধা শরীরে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমান বাড়াতে পারে। ফলে যৌন মিলনের ইচ্ছে বাড়ে। প্রাচীনকাল থেকেই ছেলেদের যৌনসমস্যা দূর করতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।
* সহনশীলতা বাড়ায় – অশ্বগন্ধা শারীরিক পারফরম্যান্সকে আরও উন্নত করার পাশাপাশি যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও করাতে কাজ করে। নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনের ফলে ধৈর্য্যশীলতা, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও সহনশীলতা প্রভৃতির উন্নতি ঘটে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় – অশ্বগন্ধায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার ফলে এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে।
* থাইরয়েডের সমস্যা কমাতে – হাইপোথাইরয়েডের অর্থাৎ যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমান কম থাকে তাদের এই সমস্যা দূর করতে ব্যবহৃত হয় অশ্বগন্ধা। শরীরে থাইরক্সিন হরমোনের পরিমান বাড়ায় এই অশ্বগন্ধা।
* চোখের সমস্যা কমাতে – প্রাচীনকালে চোখের স্বাস্থ্য ভালো করতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হত বলে জানা যায় ।
* আর্থ্রাইটিস সারাতে – আর্থ্রাইটিস এর ব্যথার তীব্রতা কমাতে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো খুবই উপযোগী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আর্থ্রাইটিস সারাতে অশ্বগন্ধা ব্যবহৃত হয়।
* ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে – অশ্বগন্ধা ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কার্যকর ফলাফল দেয়।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মতে অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলের নির্যাসে উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যালস টিউমার কোষকে ধ্বংস করতে ও সেই কোষে রক্ত সরবারহ বন্ধ করে দেয় ।ক্যান্সারের সময় কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে যাদের যেতে হয়, তাদের জীবনের মানের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা।
* ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে – অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাস অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান থাকে। এই অংশের কোষে যে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে তা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও অশ্বগন্ধা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে লিপিডের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে বলে জানা গেছে।
* স্মৃতিশক্তি উন্নত করে – যাদের অ্যালজাইমারস রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রেও অবস্থার উন্নতিতে অশ্বগন্ধা কাজ করে।
* পেশী মজবুত করে – অশ্বগন্ধা পেশী মজবুত করতে কার্যকরী ফলাফল দেয়।
* ইনফেকশন থেকে বাঁচায় অশ্বগন্ধা – অশ্বগন্ধার নানা ধরণের ইনফেকশন থেকে আমাদের বাঁচাতে সাহায্য করে কারণ এর পাতা ও মূলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এর মত উপাদান।
* হার্টের সুরক্ষায় অশ্বগন্ধা – আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল সঠিক রেখে আমাদের হার্টকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে অশ্বগন্ধা।
* অবসাদ কমাতে – অশ্বগন্ধায় অ্যাড্যাপটোজেন থাকায় এর নির্যাস অবসাদ ও মনের উদ্বেগ কমাতে উপযোগী।
* চুলের সমস্যা সমাধানে – চুলকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অশ্বগন্ধাকে খুবই উপযোগী বলে মানা হয় বেশিরভাগ খুশকি কমানোর শ্যাম্পুতে অশ্বগন্ধা থাকে কারণ অশ্বগন্ধার গুঁড়ো দিয়ে তৈরী তেল ও শ্যাম্পু খুশকি কমাতে অনবদ্য কাজ করে। এছাড়া অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস অকালে চুল পাকা আটকাতে খুবই উপকারী।
* বার্ধ্যকের ছাপ দূর করতে – আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মনে করা হয় অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে দেয় না।
* ক্ষত সারাতে – অশ্বগন্ধার ভিতর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকার ফলে এটি শরীরের ক্ষত সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
* কর্টিসল লেভেল কমাতে – মানব শরীরে অ্যাডরিনালিন গ্ল্যান্ডের কোনো সমস্যা থাকলে রক্তে কর্টিসলের পরিমান কম বেশি হয়, এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অশ্বগন্ধা ভালো সাহায্য করে।
* মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে – অশ্বগন্ধার হল এডাপ্টোজেন যার অর্থ হল অশ্বগন্ধা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সক্ষম।
***অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া – অশ্বগন্ধার হাজারো উপকারিতা থাকলেও তেমন একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে অশ্বগন্ধা নিয়িমিত অনেকদিন ধরে সেবন করলে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা, ঝিমিয়ে পড়া, ব্লাড প্রেসার কমা ও অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন।