নিমের বীজ থেকে নির্যাস বের করে বানানো হয় নিমের তেল। নিমের তেল কসমেটিকস এবং অন্যান্য সৌন্দর্য প্রসাধনীতেও ব্যবহার করা হয়। সাবান, চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ প্রভৃতিতে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের তেল ত্বকের রোগ সারাতেও বেশ কার্যকর। এ ছাড়া গায়ে মেখে ঘুমালে মশায় কামড়ায় না। নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দেহেও মালিশ করলেও নানা উপকার হয়। বাচ্চাদেরকে নিমের তেল খাওয়ালে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এখন প্রায় সবাই কম বেশি চুলের সমস্যায় ভোগেন। অনেক কিছু করেও তেমন কোন লাভ হয় না। কিন্তু এই নিমতেল চুলের যেকোনো সমস্যা রোধ করার পাশাপাশি, চুলকে সুন্দর ঘন করতেও যথেষ্ট উপকারি। নিমপাতার স্বাদ হয়তো আমরা কেউই পছন্দ করি না। কিন্তু এর তেল পছন্দ না করে উপায় নেই। কারণ চুলের জন্য এর মত উপকারী জিনিস খুব কমই আছে। আসুন তাহলে জেনেনি চুল ও ত্বকের যত্নে এর উপকারিতা।

নিমের তেলের ৮টি বিস্ময়কর উপকারিতা:

১. কালো আঁচিল দূর করে
২-৩ ফোঁটা নিমের তেল পানিতে মিশিয়ে কালো আঁচিলে নিয়মিতভাবে লাগালে তা চিরতরে দূর হয়ে যায় এবং আর কখনো ফিরে আসে না।

২. বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে
ফেসপ্যাকের সঙ্গে নিমের তেল মিশিয়ে লাগালে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ত্বকে বলিরেখা পড়া, যেকোনো ধরনের প্রদাহ এবং খোস-পাঁচড়া দূর করে নিমের তেল।

৩. চুলের যত্নে নিম
প্রতিদিন কিছুটা পরিমাণ নিমের তেল নিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে হালকা করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া বন্ধ হয়েছে এবং খুশকিও দূর হয়ে গেছে। চুলের গোড়াও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এতে।

৪.চুল ঝরা 

নিমতেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর ফলে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। নিমতেল চুলের পি এইচ ভারসাম্যকে ঠিক রাখে। যেটা চুলের জন্য খুবই দরকারি। চুল যদি পাতলা হয়ে যায় তাহলে নিমতেল ব্যবহার করুন। রোজ নিমতেল ব্যবহার করলে চুল অনেকবেশি ঘন, লম্বা আর মজবুত হবে।

৫.শুষ্ক চুল

নিম তেলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড। যেটা সুন্দর চুলের জন্য খুবই দরকারি একটি উপাদান। এটি চুলকে সুন্দর ভাবে কান্ডিশনিং করে। এবং চুলকে নরম রাখে এবং একটা সুন্দর ফুরফুরে লুক দেয়। চুলকে খুব ভালো ভাবে কান্ডিশনিং করার জন্য নিমতেল ভালো ভাবে স্ক্যাল্পে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। এবং তারপর তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। চুল যথেষ্ট চকচকে ও হেলদি হবে।

৬.খুশকির সমস্যা  

নিমতেলে আছে অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা ‘ক্যানডিডা’ নামক ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে। যার কারণে খুশকির সমস্যা হয়। এই সমস্যাকে নিমতেল খুব ভালো ভাবে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও স্ক্যাল্পে অনেক সময় ফুসকুড়ি হয়, লাল হয়ে যায়। এবং মাথা খুব চুলকোয়। এগুলি দূর করে নিমতেল। এছাড়াও স্কাল্পে অন্য কোন ইনফেকশন হলেও সেটি খুব সুন্দর ভাবে প্রতিরোধ করে।

৭.উকুনের সমস্যা  

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অনেক কিছু করেও তেমন কোন স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় না। কিন্তু যদি ব্যবহার করা যায় নিমতেল, তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিমতেল ভালো করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে, সারারাত লাগিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ভালো করে আঁচড়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। উকুন চলে যাবে।

৮.চুলে জট  

জটের জন্য খুব চুল ওঠে। এবং চুলের গ্রোথ ব্যাহত হয়। এই সমস্যারও সমাধান হতে পারে নিমতেল। আগেই বলেছি নিম তেল চুলকে কান্ডিশনিং করে। প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। তার ফলে চুলে জট পড়তে দেয়না। অতিরিক্ত শুষ্কতার জন্যই চুলে জট পড়ে। এটি উস্কখুস্ক চুলকে খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করে। সুন্দর একটা লুক দেয়। এটি ড্যামেজ চুলের কিউটিকলকে সারিয়ে তোলে।

তাহলে জানলেনতো নিম তেলের গুণ। তাই এবার নিম পাতা ভালো না লাগলেও নিম তেল কিন্তু আপনার নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।