অনেকেই মনে করেন, অ্যাপেন্ডিক্স শরীরের অপ্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ। প্রখ্যাত বিবর্তনবাদী চার্লস ডারউইনের মতে, অ্যাপেন্ডিক্স একটি অকেজো অঙ্গ, যে অঙ্গ কখনো কখনো মৃত্যুও ডেকে আনে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
পরিপাকতন্ত্রের একটি ছোট অংশ এই অ্যাপেন্ডিক্স মানবদেহের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির ফিজিওলজির প্রফেসর লরেন মার্টিনের মতে, মায়ের গর্ভে থাকার সময় এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়—উভয় ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্সের সুনির্দিষ্ট কাজ খুঁজে পাওয়া গেছে। ভ্রুণাবস্থায় অ্যাপেন্ডিক্সে থাকা কিছু কোষ দেহের স্থিতি ও সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। জন্মের পরপরই অ্যাপেন্ডিক্সে কিছু প্রতিরক্ষা কোষ আসা শুরু হয়। এখানে কিছু প্রতিরক্ষা কোষ পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে, তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। খাদ্যের সঙ্গে আমাদের পেটে যেসব ক্ষতিকর জীবাণু প্রবেশ করে, সেগুলোকে এরা মোকাবিলা করে। এ ছাড়া দেহের বিভিন্ন অংশে প্রতিরক্ষা কোষ পাঠাতেও সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর কিছু প্রক্রিয়াকেও প্রশমিত করে।
জেনে নিন, পুরুষের যৌন সমস্যার শতভাগ কার্যকরী এবং স্থায়ী সমাধান
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও অ্যাপেন্ডিক্স উপকারী একটি অঙ্গ। উপকারী ব্যাকটেরিয়ার নিরাপদ আবাস হিসেবে কাজ করে এই অঙ্গ। অ্যাপেন্ডিক্সে থাকা প্রতিরক্ষা কোষ এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে এবং পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জোগান দেয়। অ্যাপেন্ডিক্সে থাকা এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়া অনেক পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা অন্ত্রে সংক্রমণ হতে দেয় না। ডায়রিয়া হলে অন্ত্রের অন্যান্য অংশের উপকারী জীবাণু শরীর থেকে বেরিয়ে গেলেও অ্যাপেন্ডিক্সে সুরক্ষিত অবস্থানের কারণে উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো অক্ষত থাকে। আবার তা পরিপাকতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলার পর অন্ত্রে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁদের অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলা হয়, তাঁদের সিউডোমেমব্রেনাস কোলাইটিস নামক মারাত্মক রোগের ঝুঁকি প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়! এ ছাড়া হার্ট অ্যাটাক এবং দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
জেনে নিন, পুরুষের মেহ/ প্রমেহ/ প্রসাবে ক্ষয়/ ধাতু ক্ষয়জনিত সমস্যার শতভাগ কার্যকরী সমাধানসমূহ
আজকাল বিভিন্ন রকম রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারিতেও অ্যাপেন্ডিক্স কাজে লাগানো হচ্ছে। যেমন মূত্রথলির বিশেষ অপারেশন।
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে তাই অ্যাপেন্ডিক্সকে গুরুত্বহীন, অগঠিত ও অকার্যকর বলাটা অবৈজ্ঞানিকই বটে। কেইট জনসন নামক এক বিবর্তনবাদী গবেষক বলেন, ‘আমার মনে হয়, অ্যাপেন্ডিক্সকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলা বন্ধ করার সময় এসেছে। মানবদেহে এর ভূমিকা নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাওয়া উচিত।’