আমলকী, হরিতকি ও বহেড়া- এই তিনটিই আমাদের দেশীয় ফল এবং আমরা প্রায় কম-বেশী সকলেই এই তিনটি ফলের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু সত্যি বলতে, এই ফলগুলোর কার্যকরী ভেষজ গুণাবলী সম্পর্কে আমরা বেশিরভাগই হয়তো কিছু জানি না।

আমলকী, হরিতকি ও বহেড়া- এই তিনটি ফলকে একত্রে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে বলা হয় “ত্রিফলা”, যা সেবনে রয়েছে অনেক বেশী স্বাস্থ্য উপকারিতা।

ত্রিফলার ভেষজ গুনাবলী ও কার্যকারিতার কারনে প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার ও কদর রয়েছে বহুলাংশে, যা অটুট রয়েছে বর্তমানেও।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ত্রিফলার উপকারিতা সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্যাদি-

হজম ভালো রাখে:- ত্রিফলা ব্যতিক্রমী পাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। এটি অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় এবং একটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখে। এই তিন ফলের সংমিশ্রণ অন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা অন্ত্রের মধ্য দিয়ে বর্জ্য সরানো সহজ করে তোলে। যে কারণে হজম ক্ষমতা ভালো থাকে।

ডিটক্সিফিকেশন:- ত্রিফলা শরীরের জন্য প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে টক্সিন এবং ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। ত্রিফলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারকে রক্ষা করে সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল কমায়:- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ত্রিফলা খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া ত্রিফলা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:- ত্রিফলা ভিটামিন- সি সহ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এর ফলে সংক্রমণ, অসুস্থতা এবং সাধারণ সর্দি প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

ওজন কমায়:- ত্রিফলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি বিপাক নিয়ন্ত্রণ, হজমের উন্নতি এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে পাচনতন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে, যা ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় সহায়তা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপকারিতা:- ত্রিফলা ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনলসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, যা বার্ধক্য এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে যুক্ত। তাই নিয়মিত ত্রিফলা খেলে সুস্থ থাকা সহজ হয়।

ত্রিফলা কীভাবে ব্যবহার করবেন:-

বাজারে আস্ত শুকনো ত্রিফলা এবং ত্রিফলা পাউডার সারা বছর পাওয়া যায়। আস্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে রাতে একটি আমলকী, একটি হরিতকি ও একটি বহেড়া বিশুদ্ধ জলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে একমগ ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন এই জল ছেকে পান করতে হবে। ফল তিনটি তুলে রেখে আবারও একই প্রক্রিয়ায় পরপর তিনদিন খাওয়া যাবে। কারণ, শুকনো ত্রিফলার সবটুকু নির্যাস একরাতে নি:সৃত হয় না।

পাউডার বা গুঁড়া ত্রিফলার ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুম সেরে হাতমুখ ধুয়ে এক থেকে দেড় চা-চামচ ত্রিফলার গুঁড়া একমগ ঠান্ডা জলের মধ্যে দিয়ে গুলাতে হবে। ১০/১৫ মিনিট পর ওই মিশ্রণ আবারও চামচ দিয়ে ভালো করে গুলিয়ে পুরোটা খেয়ে ফেলতে হবে।

সতর্কতা:-

একটানা ১৫ দিন ত্রিফলা মিশ্রিত জল খাওয়ার পর অন্তত ৫/৭ দিন বন্ধ রাখা আবশ্যক। এরপর পুনরায় একই নিয়মে খাওয়া যাবে।