মেহেদি দিলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রুক্ষতা দূর হয়, চুল পড়া কমে ,ঝলমলে হয় এবং নতুন চুল গজানো থেকে শুরু করে চুলের নানা সম্যসা দূর করে থাকে মেহেদি।তাছাড়া; চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি এবং চুল বড় করার জন্য মেহেদী পাতার জুড়ি নেই। সুন্দর, স্বাস্থ্যোউজ্জ্বল চুলের পাশাপাশি মেহেদী মাথা ঠাণ্ডা রাখতেও বেশ কার্যকরী। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র রোদ, ধুলো-বালি ও ত্বকের ঘামের কারণে চুলের ভঙ্গুরতা তৈরি হয়। চুল উজ্জ্বলতা হারায়। সৃষ্টি হয় খুশকির। চুলের এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চুলে মেহেদী ব্যবহার করা জরুরি। তাই চুলের জন্য মেহেদী পাতা সকলের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। বাজারে এখন পাওয়া যায় মেহেদী পাতা গুঁড়ো, সেগুলোও বেশ ভালো কাজে দেয়। চুলের ক্ষেত্রে মেহেদী পাতার এই অসাধারণ যত্ন কথা নিয়েই আজকে আমাদের লেখা।

(১) চুল রাঙাতে: কোন ক্ষতি ছাড়াই চুল রাঙাতে চাইলে মেহেদীর কোন বিকল্প নেই। কারণ মেহেদিতে নেই ক্ষতিকারক অ্যামাইনো অ্যাসিড। কেমিক্যালভিত্তিক হেয়ার কালারে চুল পর্যাপ্ত আর্দ্রতা হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই চুল ভালো করে রাঙাতে দুই টেবিল চামচ শুকনো আমলকি, এক চা-চামচ ব্ল্যাক টি ও দুটি লবঙ্গ পানিতে মিশিয়ে সিদ্ধ করুন। পানি ভালো করে ঘুটে নিন। এর সঙ্গে মেহেদি পেস্ট মিশিয়ে নিন। কমপক্ষে দুই ঘন্টা পর চুলে লাগান। মুহূতেই মিলবে রাঙা চুল।

(২) মাথার তালুর চুলকানি দূর করতে:
মেহেদির সঙ্গে আমলা পাউডার মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এটি মাথার তালুর অ্যালার্জি ও চুলকানি দূর করবে।

(৩) চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করতে:
মেহেদির ভেষজ গুণ চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

(৪) কন্ডিশনার হিসেবে: কন্ডিশনার হিসেবে মেহেদীর তুলনা নেই। মেহেদী চুলের উপর একটি প্রতিরোধক স্তর তৈরি করে,যা চুলকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। এতে চুল হয় উজ্জ্বল ও দ্বিগুণ শক্তিশালী। কন্ডিশনার হিসেবে যদি মেহেদী ব্যবহার করতে চান, তবে চুলে শ্যাম্পু করার পর মেহেদি ব্যবহার করুন।কেন চুলে মেহেদি লাগাবেন?

(৫) চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে:
মেহেদি চুলে নিয়ে আসে জৌলুস। মেহেদির সঙ্গে ডিম ও তেল মিশিয়ে চুলে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে ঝলমলে ও সুন্দর।

(৬)শ্যাম্পু হিসেবে:
মেহেদির প্যাক ব্যবহার করলে আলাদা করে শ্যাম্পু ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কারণ মেহেদি প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে চুল।

(৭)চুলের গোড়া মজবুত করতে:
মেহেদি চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। তবে খুব ঘন ঘন মেহেদি লাগাবেন না। এতে চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।

(৮) স্বাস্থ্যজ্বল চুল পেতে: মাসে অন্তত ২ বার চুলে মেহেদী ব্যবহার করুন। এতে চুল হবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর। চুল ফিরে পাবে হারানো জৌলুস। তবে তার জন্য মেহেদী শুধু পেস্ট করে লাগালেই হবেনা। তার জন্য বিশেষ একটি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আমলকি মেশানো পানিতে দুই ঘণ্টা মেহেদী পাতা ভিজিয়ে রেখে পিষে নিন। এবার মাথার তালুসহ চুলে লাগান। যদি প্যাকেটের গুড়ো মেহেদী ব্যবহার করতে চান, তবে তার সাথে আমলকির পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার দুই ঘন্টা রেখে তারপর ব্যবহার করুন।

(৯) খুশকি তাড়াতে: খুশকির সমস্যায় কম বেশি সকলেই পরে থাকেন। এই নিয়ে বেশ হীনমন্যতায় ও পরেন অনেকে। এই সমস্যার সমাধান করবে মেহেদী। মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে নিন। পরিমাণ মত সরিষার তেল গরম করে এতে মেহেদী পাতা ফেলে দিন। ঠাণ্ডা হলে এই তেলে মেথি বাটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে লাগান। ২ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি মুক্ত হবে চুল খুব দ্রুত।

(১০) চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে মেহেদী:
ঘন কালো উজ্জ্বল চুল পেতে কার না মন চায়। কিন্তু আবাহাওয়ার বিরূপ অবস্থা এবং কাজের ব্যস্ততার জন্য চুলের দিকে খেয়াল রাখার সময় হয় না কারোরই। কিন্তু মেহেদী পাতা ব্যবহারে খুব সহজেই পেতে পারেন স্বাস্থ্যোউজ্জ্বল ঘন কালো চুল।

(১১) চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা রোধে মেহেদী:
মেহেদী চুলের জন্য কন্ডিশনারের কাজ করে চুলের রুক্ষতা এবং চুলের আগা ফাটা রোধ করে। ১ কাপ মেহেদী পাতা বাটার সাথে ২/৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ টি ভিটামিন ই ট্যাবলেট মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগান এই মিশ্রণটি। ১ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু করে। সপ্তাহে ১ দিনের ব্যবহারে চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা একেবারে বন্ধ হবে।

(১২) সাদা চুল ঢেকে ফেলুন মেহেদী ব্যবহারে:
মেহেদী সাদা চুলের জন্য অসাধারণ হেয়ার কালারের কাজ করে। অনেকের অল্প বয়েসেই মাথার চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। তারা নিয়মিত মেহেদী পাতা ব্যবহার করলে চুলের সাদাটে ভাব দূর করতে পারবেন। প্রথমে ২ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ো ১ কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে দিয়ে এতে রঙ চা দিন ১ চা চামচ এবং ২ টি লবঙ্গ। এবার এই পানিতে পরিমাণ মত মেহেদী পাতা বাটা ব্যবহার করে থকথকে পেস্টের মত তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা। ২ ঘণ্টা পরে চুল সাধারণ ভাবে ধুয়ে ফেলুন। সাদা চুল ঢেকে যাবে সহজেই।

(১৩) চুল উঠে যাওয়া ও পাকায়: হরীতকী ১টি ও মেহেদিপাতা ১ তোলা মতো একটু থেতো করে আধ পোয়া জলে সিদ্ধ করে আধ ছটাক মতো থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে ঠাণ্ডা হলে সপ্তাহে ২ দিন মাথায় লাগাতে দিয়ে থাকেন ইউনানি চিকিৎসক সম্প্রদায়। আমি মনে করি এর সঙ্গে কেশতের পাতা (যার চলতি নাম কৈশত) (Eclipta alba) ২।১ তোলা ক্বাথ করার সময় ওর সঙ্গে দিলে আরও ভাল হয়।