তালমিছরি ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই সমান ভাবে জনপ্রিয়। এটি যেমন খেতে ভালো তেমনি উপকারী। তালমিছরিকে’ ন্যাচারাল সুগার’ বলা হয়ে থাকে। কারণ এটি তৈরী হতে কোনোরকম কেমিকেল ব্যবহৃত হয় না। তালগাছের রস থেকে এই মিছরি তৈরী হয়। আমরা যে চিনি ব্যবহার করি তার তুলনায় তালমিছরিতে কার্বোহাইড্রেড অনেক কম থাকে। মিছরির ব্যবহার বহুদিন ধরেই হয়ে আসছে। নানা ধরনের আয়ুর্বেদিক ঔষধ হোক কি সাধারণ সর্দি কাশিতে, চিনির মিছরি বা তাল মিছরি সমান ভাবে আজও বিরাজমান বাংলার ঘরে ঘরে। তালুমিছরির কথা শুনলেই যাদের মনে পড়ে সুগার, প্রেশার বা চিনি খাওয়ার যে খারাপ দিকগুলি,তাদের অবগতির জন্য জানাই,বাজার চলতি চিনি আর মিছরির মধ্যে পার্থক্য আছে।
আসুন, এবারে জেনে নেওয়া যাক – তালমিছরির গুনাগুন বিষয়ক তথ্যাদি
১) রক্তস্বল্পতায়: হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, তালমিছরি রক্তস্বল্পতা সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। কারণ তালমিছরিতে থাকে আয়রন, যেটি রক্তের হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
২) হাড়ের সমস্যা সমাধান: প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম আর পোট্যাশিয়াম থাকার কারণে তালমিছরি হাড় ও দাঁত শক্ত করে ও হাড়ের সমস্যা দূর করে।মেয়েদের মেনোপজের পরে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে এবং হাড় ভাঙ্গার সমস্যা একটি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত তালমিছরি সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। এই দুটি কারণের জন্য বাচ্চাদের জন্যও তালমিছরি খুব উপকারী।
৩) সর্দি কাশির উপশম: তালমিছরির রস কাশি উপশম করতে সাহায্য করে এবং গলায় শ্লেষ্মা নরম করে দেয়, ফলে গলায় খুসখুসানি কমে যায়।এক টুকরো তালমিছরি মুখে নিয়ে চুষলে সর্দিতে এবং কাশিতে আরাম পাওয়া যায়। খুব ছোট বাচ্চাদের জন্য ওষুধ না ব্যবহার করে তালমিছরির প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এটি ঠান্ডা লাগাও প্রতিরোধ করে। কাশতে কাশতে গলায় ব্যথা হলে এক টুকরো তালমিছরি গোলমরিচ আর ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে এক চামচ খেলে গলা ব্যাথায় উপকার মেলে। এক চামচ তালমিছরি,গোলমরিচ এবং আমন্ড-এর পেস্ট রোজ রাতে গরম দুধের সাথে খেলে নাকের শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিহত করে।
৪) চোখের দৃষ্টি বাড়ায়: বাদাম,মৌরী,তালমিছরি এবং গোলমরিচ এর গুঁড়ো করে রোজ রাতে ১ চামচ করে দুধের সাথে খেলে তা চোখের দৃষ্টি বাড়ায়।
৫) কিডনি স্টোন এর জন্য: পেঁয়াজের রসের সাথে তালমিছরি মিশিয়ে কিছুদিন খেলে কিছুদিনের মধ্যেই প্রস্রাবের সাথে কিডনি স্টোন বেরিয়ে যায়
৬) পেটে ব্যথা: তালমিছরি পেটের ব্যথার উপশম এবং পাতলা পায়খানাতে ভীষণ কার্যকরী । নিমপাতার সাথে তালমিছরি খেলে পেটের ব্যথা কমে।
৭) নাক দিয়ে রক্ত পড়া: অনেকেরই গরমকালে নাক দিয়ে রক্তপাত হয়। নাকের কাছে মিছরি গুঁড়ো করে শুঁকলে রক্তপাতের উপশম হয়।
৮) মুখের আলসার: মুখের আলসারের জ্বালাতে উপশম পেতে তালমিছরি আর এলাচ গুঁড়ো করে পেস্ট করে মুখের ভেতরে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৯) নতুন মায়েদের জন্য: বলা হয়,ব্রেস্ট মিল্ক এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য তালমিছরি খুব উপকারী। কালো তিল এর সাথে তালমিছরি গুঁড়ো করে গরম দুধের সাথে দিনে দুবার খেলে ব্রেস্ট মিল্ক উত্পাদনে সহায়তা মেলে।
১০) মাথা ধরা: সাইনাসের জন্য বা চোখের জন্য মাথা ধরা খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। বহু মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। আদার রসের সাথে তালমিছরি খেলে সাইনাস জনিত মাথাধরা থেকে উপশম মেলে। তুলসী পাতা, তালমিছরি আর গোটা মরিচ একসাথে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
১১) কন্সটিপেশন: তালমিছরিতে ডায়েটারি ফাইবারের প্রাচুর্যের জন্য এটি হজমে সাহায্য করে এবং কন্সটিপেশান সারিয়ে তোলে। এছাড়াও,চিনি বা মধুর তুলনায় তালমিছরি আমাদের শরীরে অনেক কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট তৈরি করে,ফলে তালমিছরি সেবনে ক্লান্তি অনেক কম হয়, শরীরকে সতেজ রাখে।
১২) গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ: তালমিছরিতে জি আই বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমান চিনি ,মধু ইত্যাদির থেকে অনেক কম থাকে,যার থেকে আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেড কম তৈরী হয় ফলত এটি আমাদের রক্তে Glucose এর মাত্রা কে বাড়তে দেয়না। এই কারণে এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এ সহায়তা করে।
১৩) ডায়রিয়াতে: বার বার পাতলা পায়খানা বা বমি হলে আমাদের শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলের মাত্রা কমে যায়। ধনে গুঁড়োর সাথে তালমিছরি গুঁড়ো মিশিয়ে জলের সাথে দিনে ২-৩ বার খেলে পাতলা পায়খানা কমে যায় ।
১৪) চিনির বিকল্প: তালমিছরি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মিষ্টি। এতে খুব কম পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) থাকায় রক্তের সুগারের ওপর খুব কম প্রভাব পড়ে। ডায়াবেটিস সমস্যায় যাদের চিনি খাওয়ায় সমস্যা আছে, তারা এটি খেতে পারে।
১৫) কোষের সুরক্ষা: তালমিছরি তৈরী হতে কোনোরকম কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় না, উপরন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এতে ভিটামিন, পটাসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার ইত্যাদি জরুরি মিনারেলস থাকে যা আমাদের শরীরের কোষগুলিকে সুস্থ্য রাখে, এবং সুস্থ্য কোষ গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া আমিনো অ্যাসিড শরীরে প্রোটিন ব্লক তৈরী করে যা কোষগুলিকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।